আধুনিক ভারতীয় রাজনৈতিক চিন্তাধারা একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও | কয়েকজন ব্যক্তির পরিচয় দাও।
>>>>>>>>>> উত্তর <<<<<<<<<<আধুনিক ভারতীয় রাজনৈতিক চিন্তাধারা: একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ
আধুনিক ভারতীয় রাজনৈতিক চিন্তাধারা মূলত ঔপনিবেশিক শাসন, স্বাধীনতা আন্দোলন, এবং স্বাধীনতা-উত্তর রাষ্ট্র নির্মাণের অভিজ্ঞতা থেকে বিকশিত হয়েছে। এই চিন্তাধারা একদিকে যেমন পাশ্চাত্য রাজনৈতিক মতাদর্শ যেমন গণতন্ত্র, উদারতা, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও মানবাধিকার দ্বারা প্রভাবিত, তেমনি ভারতীয় ঐতিহ্য, ধর্ম, সমাজব্যবস্থা এবং জাতপাতের বাস্তবতার প্রতিফলনও এতে পাওয়া যায়।
এই চিন্তাধারার মূল লক্ষ্য ছিল—
-
ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গঠন
-
সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার
-
জাতি, শ্রেণি ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের অবসান
-
একটি গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠন।
ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গঠন
সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার
জাতি, শ্রেণি ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের অবসান
একটি গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠন।
প্রধান বৈশিষ্ট্য:
-
জাতীয়তাবাদ: ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে।
-
ধর্মনিরপেক্ষতা: ধর্মীয় বিভাজনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা।
-
সামাজিক ন্যায়বিচার: জাতপাত ও বর্ণভিত্তিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম।
-
গণতন্ত্র: জনগণের অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থার ধারণা।
-
উন্নয়নবাদ ও সমাজতন্ত্র: অর্থনৈতিক সাম্য, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণা।
জাতীয়তাবাদ: ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে।
ধর্মনিরপেক্ষতা: ধর্মীয় বিভাজনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা।
সামাজিক ন্যায়বিচার: জাতপাত ও বর্ণভিত্তিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম।
গণতন্ত্র: জনগণের অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থার ধারণা।
উন্নয়নবাদ ও সমাজতন্ত্র: অর্থনৈতিক সাম্য, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণা।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক ভারতীয় রাজনৈতিক চিন্তাবিদের পরিচয়ঃ
১. রাজা রামমোহন রায় (1772–1833)
-
আধুনিক ভারতীয় নবজাগরণের পথিকৃৎ।
-
সতীদাহ প্রথা ও ধর্মীয় কুসংস্কার বিরোধী।
-
সামাজিক সংস্কার এবং যুক্তিবাদী চিন্তাধারার প্রবর্তক।
-
ভারতীয় সমাজে ধর্মনিরপেক্ষতা ও মানবতাবাদের বীজ বপন করেন।
২. দাদাভাই নওরোজি (1825–1917)
-
"ড্রেন থিওরি"–এর প্রবক্তা।
-
ব্রিটিশ শাসনে ভারতের আর্থিক শোষণ নিয়ে বিশ্লেষণমূলক রাজনৈতিক অর্থনীতি তুলে ধরেন।
-
প্রথম ভারতীয় যিনি ব্রিটিশ সংসদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
৩. বাল গঙ্গাধর তিলক (1856–1920)
-
চরমপন্থী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা।
-
"স্বরাজ আমার জন্মসিদ্ধ অধিকার" - এই উক্তির জন্য বিখ্যাত।
-
তিনি গণআন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিকে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেন।
৪. মহাত্মা গান্ধী (1869–1948)
-
অহিংসা ও সত্যাগ্রহ আন্দোলনের নেতা।
-
গ্রামীণ স্বরাজ, আত্মনির্ভরতা, নৈতিক রাজনীতি ও সরল জীবনযাপন তাঁর ভাবনার মূল অংশ।
-
ধর্মনিরপেক্ষতা ও সহিষ্ণুতা তাঁর রাজনৈতিক চিন্তার ভিত্তি।
৫. ড. বি. আর. আম্বেদকর (1891–1956)
-
ভারতের সংবিধান প্রণেতা।
-
দলিতদের অধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রবক্তা।
-
বর্ণব্যবস্থা ও হিন্দু ধর্মের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সংগ্রামী।
-
সামাজিক গণতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন।
৬. জওহরলাল নেহরু (1889–1964)
-
ধর্মনিরপেক্ষ, আধুনিক, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রবক্তা।
-
বিজ্ঞানমনস্কতা ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণের উপর জোর দেন।
-
রাষ্ট্রের মাধ্যমে পরিকল্পিত উন্নয়নের ধারণা তুলে ধরেন।
৭. রাম মনোহর লোহিয়া (1910–1967)
-
সমাজবাদী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
-
জাতপাত বিরোধী রাজনীতির পক্ষে ছিলেন।
-
"পাঁচ জাতির থিসিস" ও "অংশীদারিত্বের রাজনীতি"-র মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের কথা বলেন।
উপসংহারঃ
আধুনিক ভারতীয় রাজনৈতিক চিন্তাধারা নানা মতাদর্শ ও অভিজ্ঞতা থেকে গড়ে উঠেছে, যার ভিত্তি হল মানবিকতা, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার। এই চিন্তাবিদদের অবদান শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, সামাজিক ও নৈতিক পরিমণ্ডলেও গভীর প্রভাব ফেলেছে।
0 মন্তব্যসমূহ