ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে প্রশাসনিক সম্পর্কটি ব্যাখ্যা কর।

ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে প্রশাসনিক সম্পর্কটি ব্যাখ্যা কর।

ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে প্রশাসনিক সম্পর্কটি ব্যাখ্যা কর।

ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে প্রশাসনিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা:

ভারত একটি সাংবিধানিক সংবিধানিক যুক্তরাষ্ট্র (Constitutional Federal State), যেখানে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ের নিজস্ব ক্ষমতা ও দায়িত্ব রয়েছে। ভারতীয় সংবিধানে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সম্পর্ক তিনটি ভাগে বিভক্ত—বৈধিক (Legislative), প্রশাসনিক (Administrative), ও অর্থনৈতিক (Financial)। এদের মধ্যে প্রশাসনিক সম্পর্ক রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বাস্তব দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব নির্ধারণ করে।


১. সংবিধানের প্রশাসনিক বিধান:

ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ 256 থেকে 263 পর্যন্ত প্রশাসনিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ ধারাগুলোর মাধ্যমে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে কিভাবে কাজ ভাগ করা হবে, তা নির্ধারিত হয়।


২. প্রশাসনিক সম্পর্কের মূল বৈশিষ্ট্য:

ক. কেন্দ্রের আইন বাস্তবায়নে রাজ্যের দায়িত্ব (অনুচ্ছেদ 256):

যদি সংসদ কোনো আইন প্রণয়ন করে, তবে রাজ্য সরকারকে সেই আইন কার্যকর করতে হবে, এমনকি তা যদি রাজ্যের তালিকার অধীন বিষয়ে হয়, তবুও তা করতে হবে যদি তা জাতীয় স্বার্থে হয়।

খ. রাজ্যের প্রতি নির্দেশ জারি (Direction) করতে কেন্দ্রের ক্ষমতা (অনুচ্ছেদ 257):

কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারকে নির্দিষ্ট বিষয়ে নির্দেশ দিতে পারে, যদি মনে করে যে এটি জাতীয় স্বার্থে বা সংবিধান রক্ষার্থে প্রয়োজন।

গ. সহযোগিতা ও সমন্বয়:

কেন্দ্র ও রাজ্য একে অপরের মধ্যে প্রশাসনিক সহায়তা করতে বাধ্য। উদাহরণস্বরূপ, পুলিশ বাহিনী, তথ্য বিনিময়, সীমানা ব্যবস্থাপনা ইত্যাদিতে সমন্বয় প্রয়োজন হয়।

ঘ. কেন্দ্রীয় তত্ত্বাবধানে রাজ্য প্রশাসন (Article 365):

যদি কোনো রাজ্য সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্রের নির্দেশ মানতে ব্যর্থ হয়, তবে রাষ্ট্রপতি সেই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন (President’s Rule) জারি করতে পারেন।


৩. কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ক্ষেত্র:

‌‌‌১. আইন-শৃঙ্খলা:

যদিও 'পুলিশ' রাজ্য তালিকাভুক্ত একটি বিষয়, কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ বা জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করতে পারে।

২. দুর্যোগ বা জরুরি পরিস্থিতি:

জাতীয় দুর্যোগ, মহামারী বা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কেন্দ্র রাজ্যের ওপর নির্দিষ্ট নির্দেশ দিতে পারে এবং সেই অনুযায়ী রাজ্যকে কাজ করতে হয়।

৩. All India Services (যেমন IAS, IPS):

এই পরিষেবাগুলোর নিয়োগ কেন্দ্রীয় সরকার করে, তবে তারা রাজ্যে কাজ করে। এভাবে কেন্দ্র রাজ্য প্রশাসনে প্রভাব রাখতে পারে।


৪. আন্তঃরাজ্য পরিষদ (Inter-State Council):

অনুচ্ছেদ 263 অনুযায়ী, রাজ্যগুলোর মধ্যে এবং কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য রাষ্ট্রপতি একটি আন্তঃরাজ্য পরিষদ গঠন করতে পারেন।


৫. জরুরি অবস্থায় প্রশাসনিক সম্পর্ক:

  • জাতীয় জরুরি অবস্থা (Article 352): কেন্দ্র সব প্রশাসনিক ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নিতে পারে।

  • ভারতের রাষ্ট্রপতির শাসন (Article 356): রাজ্য সরকারকে বরখাস্ত করে কেন্দ্র সেখানে প্রশাসন চালাতে পারে।

  • আর্থিক জরুরি অবস্থা (Article 360): কেন্দ্র রাজ্যের আর্থিক সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।


উপসংহার:

ভারতের কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রশাসনিক সম্পর্ক একটি সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিফলন। যদিও সংবিধান রাজ্যকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দিয়েছে, তবে কেন্দ্রীয় সরকারকে তুলনামূলকভাবে অধিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যাতে জাতীয় অখণ্ডতা ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে। কার্যত, প্রশাসনিক সম্পর্ককে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সমঝোতা এবং সমন্বয় অপরিহার্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ