ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে বা আন্দোলনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান আলোচনা করো।

ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে বা আন্দোলনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান আলোচনা করো।

ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে বা আন্দোলনে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান আলোচনা করো।


>>>>>>>>>> উত্তর  <<<<<<<<<

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু (১৮৯৭–১৯৪৫?) ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বীর সৈনিক এবং সংগ্রামী নেতৃবৃন্দের মধ্যে সবচেয়ে বিপ্লবী ও সাহসী নেতা। তিনি কেবল অহিংস আন্দোলনের বাইরে গিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা আদায়ের লক্ষ্যে আপসহীন লড়াই করেছিলেন।


১. প্রাথমিক অবদান ও কংগ্রেস রাজনীতি:

(ক) কংগ্রেসে যোগদান ও নেতৃত্ব:
সুভাষচন্দ্র আই.সি.এস. পাস করেও দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি কংগ্রেসের তরুণপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত হন।

  • তিনি চিত্তরঞ্জন দাশের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।

  • ১৯৩৮ ও ১৯৩৯ সালে তিনি কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন (হারিপুর ও ত্রিপুরী অধিবেশন)।

  • মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে মতবিরোধের কারণে তিনি ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ গঠন করেন।


২. আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা:

(ক) বিদেশে গমন ও সমর্থন সংগ্রহ:
১৯৪১ সালে সুভাষচন্দ্র ব্রিটিশ নজরদারি ভেদ করে জার্মানি ও পরে জাপানে যান।

  • তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের স্বাধীনতার দাবি তুলে ধরেন।

  • হিটলার, মুসোলিনি ও জাপানের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন ভারতকে সমর্থন দেওয়ার জন্য।


৩. আজাদ হিন্দ ফৌজ (INA) গঠন ও সংগ্রাম:

(ক) INA-এর নেতৃত্ব গ্রহণ:
সিঙ্গাপুরে তিনি জেনারেল মোহন সিং-এর কাছ থেকে আজাদ হিন্দ ফৌজ (Indian National Army – INA)-এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।

  • ১৯৪৩ সালে তিনি আজাদ হিন্দ সরকার গঠনের ঘোষণা দেন এবং নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন।

  • এই সরকারকে জাপান, জার্মানি, ইতালি, ফিলিপাইন, কোরিয়া, চীন প্রভৃতি দেশ স্বীকৃতি দেয়।

(খ) “চলো দিল্লি” অভিযান:
নেতাজি INA-র মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতের দিকে অগ্রসর হন— “চলো দিল্লি” স্লোগান দিয়ে।

  • তারা আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ব্রিটিশদের কাছ থেকে দখল করে নিয়ে ভারতের স্বাধীন ভূমি হিসেবে ঘোষণা করেন।

  • কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ও জাপানের পরাজয়ের কারণে এই অভিযান ব্যর্থ হয়।


৪. আদর্শ ও প্রভাব:

(ক) দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগের প্রতীক:
সুভাষচন্দ্র বিশ্বাস করতেন যে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনে সশস্ত্র বিপ্লব জরুরি।

  • তাঁর বক্তব্য “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব” আজও অনুপ্রেরণার প্রতীক।

  • তিনি নির্ভীক ও আত্মনিবেদিত দেশভক্ত হিসেবে স্মরণীয়।

(খ) INA-র বিচার ও জাতীয় চেতনার উন্মেষ:
INA-র সৈনিকদের বিচার যখন ইংরেজ সরকার শুরু করে, তখন গোটা ভারত উত্তাল হয়ে ওঠে।

  • হিন্দু-মুসলিম-শিখের একতা দেশজুড়ে জাগে।

  • এতে ভারতীয় সেনার মধ্যেও বিদ্রোহের সূচনা হয় এবং ব্রিটিশ শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে।


উপসংহার:

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কেবল একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীই নন, তিনি ছিলেন এক অসাধারণ নেতা যিনি আত্মবলিদানের মাধ্যমে জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। অহিংস আন্দোলনের পাশাপাশি সশস্ত্র বিপ্লবের পথকে সুনির্দিষ্ট রূপ দিয়ে তিনি স্বাধীনতার সংগ্রামে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেন। তাঁর জীবন ও আদর্শ আজও ভারতীয়দের অনুপ্রেরণার উৎস। এজন্যই তাঁকে বলা হয়— "ভারতের বীর সন্তান" ও "আধুনিক বিপ্লবের মহানায়ক"।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ