ভারতের দল ব্যবস্থার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।

ভারতের দল ব্যবস্থার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।

ভারতের দল ব্যবস্থার প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।


ভূমিকা : - 

ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলসমূহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নির্বাচন, সরকার গঠন, নীতিনির্ধারণ ও জনগণের মতপ্রকাশের মাধ্যম হিসেবে দলগুলি কাজ করে। ভারতীয় রাজনৈতিক দলব্যবস্থার প্রকৃতি জটিল ও বহুমাত্রিক, যা দেশের বহু জাতি, ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতি-র বৈচিত্র্যের প্রতিফলন।


🏛️ ১) ভারতের দল ব্যবস্থার প্রকৃতি (Nature of Indian Party System)

ভারতের দলব্যবস্থার প্রকৃতি বোঝাতে গেলে একে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করে বোঝা যায়:

(ক) বহুদলীয় ব্যবস্থা (Multi-Party System)

ভারতে বহু দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং কেন্দ্র ও রাজ্যস্তরে বিভিন্ন দল ক্ষমতায় থাকে। ফলে এটি একক বা দ্বিদলীয় নয়, বরং একটি বহুদলীয় (multi-party) ব্যবস্থা।

(খ) প্রভাবশালী দলীয় ব্যবস্থা (Dominant Party System)

স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় ধরে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ছিল একচ্ছত্র প্রভাবশালী দল। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত কংগ্রেস একপ্রকার প্রভাবশালী দলীয় ব্যবস্থা (One-party dominance) বজায় রেখেছিল।

(গ) জোট রাজনীতির উত্থান (Coalition Politics)

১৯৯০-এর দশক থেকে কেন্দ্রীয় স্তরে কোনও দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় জোট সরকার (Coalition Government) গঠন শুরু হয়, যেমন:

  • UPA (United Progressive Alliance) — কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন

  • NDA (National Democratic Alliance) — বিজেপি নেতৃত্বাধীন

(ঘ) আঞ্চলিক দলগুলোর উত্থান

রাজ্যভিত্তিক সমস্যা, ভাষা ও সংস্কৃতির প্রশ্নে বহু আঞ্চলিক দল গঠিত হয়েছে, যেমন:

  • DMK, AIADMK (তামিলনাড়ু),

  • TMC (পশ্চিমবঙ্গ),

  • BJD (ওড়িশা),

  • AAP (দিল্লি-পাঞ্জাব),

  • TRS (তেলেঙ্গানা)।


✨ ২) ভারতের দল ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Indian Party System)

১. বহুদলীয়তা (Multi-Party System)

ভারতে জাতীয় ও আঞ্চলিক দল মিলিয়ে শতাধিক রাজনৈতিক দল রয়েছে। এদের মধ্যে কিছু জাতীয় স্বীকৃতি পায়, আবার কিছু শুধুমাত্র রাজ্য পর্যায়ের।

২. আঞ্চলিকতার প্রাধান্য

বিভিন্ন রাজ্যে আঞ্চলিক দলগুলোর প্রভাব রয়েছে, যা তাদের রাজ্যের ভাষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক দাবি নিয়ে কাজ করে।

৩. ব্যক্তিনির্ভর রাজনীতি

অনেক দল একজন নেতার ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভরশীল। যেমন:

  • মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (TMC),

  • অরবিন্দ কেজরিওয়াল (AAP),

  • মায়াবতী (BSP),

  • লালু প্রসাদ যাদব (RJD)।

৪. জোট প্রথার বিস্তার

বহু দল নির্বাচনে লড়াই করলেও সরকার গঠনের জন্য জোট গঠন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। জাতীয় রাজনীতিতে এককদলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ক্রমেই দুর্লভ হয়ে পড়েছে।

৫. ভূমিকা পরিবর্তনশীলতা

ভারতের দলব্যবস্থা স্থির নয়, বরং পরিবর্তনশীল। একসময় কংগ্রেস ছিল প্রধান শক্তি, এখন বিজেপি। আঞ্চলিক দলগুলিও রাজ্যভিত্তিক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে।

৬. বিভিন্ন আদর্শ ও মতবাদ

ভারতের রাজনৈতিক দলগুলির আদর্শগত পার্থক্য রয়েছে:

  • বামপন্থী (CPI, CPM),

  • দক্ষিণপন্থী (BJP),

  • মধ্যপন্থী ও উদারপন্থী (Congress, AAP)।

৭. পরিবারতন্ত্র বা ডাইনাস্টিক রাজনীতি

অনেক রাজনৈতিক দলে পরিবারভিত্তিক নেতৃত্ব দেখা যায়:

  • কংগ্রেস (গান্ধী পরিবার),

  • RJD (লালু পরিবার),

  • SP (মুলায়ম পরিবার),

  • NCP (শরদ পাওয়ার পরিবার)।

৮. ধর্ম, জাতি ও শ্রেণী ভিত্তিক দল

অনেক দল জাতি, ধর্ম বা শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করে। যেমন:

  • BSP (দলিত),

  • AIMIM (মুসলিম),

  • INLD (জাঠ)।


📌 উপসংহার

ভারতের রাজনৈতিক দলব্যবস্থা একদিকে যেমন বহুবচনভিত্তিক গণতন্ত্রের প্রতিফলন, অন্যদিকে কখনও কখনও বিভাজনের উৎসও। এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রূপান্তরিত হয়েছে — প্রভাবশালী দলীয়তা থেকে জোট রাজনীতি, কেন্দ্রীয়ীকরণ থেকে আঞ্চলিক বিকেন্দ্রীকরণে। তবে এর মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়ে গেছে — জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ