ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলির হাইকোর্টের গঠন, এক্তিয়ার ও কার্যাবলী আলোচনা কর।
ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলির হাইকোর্ট (High Court) হল প্রতিটি রাজ্যের বা কখনও কখনও একাধিক রাজ্যের জন্য সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়। এটি ভারতের বিচারব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ স্তর। নিচে ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলির হাইকোর্টের গঠন, এক্তিয়ার (অধিকার) ও কার্যাবলী আলোচনা করা হল:
🏛️ হাইকোর্টের গঠন:
-
সংবিধান অনুযায়ী ভিত্তি:
-
ভারতের সংবিধানের 214 নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি রাজ্যে একটি হাইকোর্ট থাকবে। তবে একাধিক রাজ্যের জন্য একটি যৌথ হাইকোর্টও থাকতে পারে।
-
-
নিয়োগ:
-
মুখ্য বিচারপতি (Chief Justice) ও অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পরামর্শে।
-
তাদের অবসর গ্রহণের বয়স: 62 বছর।
-
-
গঠন প্রণালী:
-
একটি হাইকোর্টে একজন মুখ্য বিচারপতি ও প্রয়োজন অনুসারে এক বা একাধিক বিচারপতি থাকেন।
-
বিচারপতিদের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় কাজের পরিমাণ ও মামলার পরিসরের ভিত্তিতে।
-
⚖️ হাইকোর্টের এক্তিয়ার (অধিকার):
হাইকোর্টের এক্তিয়ার বা ক্ষমতা প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত:
1. মূল এক্তিয়ার (Original Jurisdiction):
-
সরাসরি হাইকোর্টে কিছু বিশেষ মামলা দায়ের করা যায়, যেমন:
-
মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের মামলা (সংবিধানের 226 অনুচ্ছেদ অনুযায়ী)।
-
রাজ্যের সরকারি কর্মকর্তা ও দপ্তরের বিরুদ্ধে মামলা।
-
2. আপিল সংক্রান্ত এক্তিয়ার (Appellate Jurisdiction):
-
অধঃস্তন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হাইকোর্টে করা যায়।
-
দেওয়ানি, ফৌজদারি ও সংবিধান সংক্রান্ত মামলার আপিল শোনা হয়।
3. তত্ত্বাবধানে এক্তিয়ার (Supervisory Jurisdiction):
-
হাইকোর্ট তার অধীনস্থ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান রাখে।
4. রিট জারি করার ক্ষমতা:
-
সংবিধানের 226 অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট নিম্নলিখিত পাঁচটি রিট (writ) জারি করতে পারে:
-
হেবিয়াস কর্পাস (Habeas Corpus) – বেআইনি আটক থেকে মুক্তি দিতে।
-
ম্যান্ডামাস (Mandamus) – কর্তব্য পালন না করলে আদেশ দেওয়ার জন্য।
-
প্রোহিবিশন (Prohibition) – অধঃস্তন আদালতকে অতিরিক্ত কাজ থেকে বিরত রাখতে।
-
সার্টিওরারি (Certiorari) – অবৈধ সিদ্ধান্ত বাতিল করতে।
-
কোও ওয়ারান্টো (Quo Warranto) – বেআইনি ভাবে পদে অধিষ্ঠান চ্যালেঞ্জ করতে।
-
📚 হাইকোর্টের কার্যাবলী:
-
আইন প্রয়োগ:
-
হাইকোর্ট রাজ্যের আইন মেনে ন্যায়বিচার করে।
-
-
মৌলিক অধিকার রক্ষা:
-
নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য সরাসরি হাইকোর্টে মামলা করা যায়।
-
-
সরকারি কাজ পর্যবেক্ষণ:
-
রাজ্য সরকারের কাজকর্ম ও সিদ্ধান্ত হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করা যায়।
-
-
নিম্ন আদালতের রায় পর্যালোচনা:
-
হাইকোর্ট অধঃস্তন আদালতের রায়ের পুনর্বিচার করতে পারে।
-
-
প্রশাসনিক কাজ:
-
বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা রক্ষায় হাইকোর্ট ভূমিকা পালন করে।
-
🔚 উপসংহার:
ভারতের হাইকোর্টগুলি রাজ্য স্তরে ন্যায়বিচারের মূল স্তম্ভ। এটি সংবিধান, আইন এবং নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলী বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে।
0 মন্তব্যসমূহ