রাজ্য আইনসভার গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা:
ভারতের সংবিধানে প্রতিটি রাজ্যের জন্য একটি আইনসভা গঠনের বিধান রয়েছে। রাজ্য আইনসভা মূলত রাজ্যের আইন প্রণয়ন ও প্রশাসনিক তদারকির কাজ করে। সংবিধানের অষ্টম ভাগ (Part VI) এর অধ্যায় ৩ (Chapter III) অনুযায়ী রাজ্য আইনসভা সংক্রান্ত বিষয়গুলি নির্ধারিত হয়েছে।
🔷 ১. রাজ্য আইনসভার গঠন (Structure of State Legislature):
ভারতের রাজ্যে দুই ধরনের আইনসভা হতে পারে:
✅ ক. একক কক্ষ বিশিষ্ট (Unicameral Legislature):
-
অধিকাংশ রাজ্যে শুধুমাত্র একটি কক্ষ থাকে—বিধানসভা (Legislative Assembly) বা রাজ্য বিধানসভা।
-
যেমন: পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার (সাম্প্রতিক ব্যতিক্রম ছাড়া) ইত্যাদি।
✅ খ. দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট (Bicameral Legislature):
-
কিছু রাজ্যে দুটি কক্ষ থাকে:
-
বিধানসভা (Legislative Assembly / Vidhan Sabha)
-
বিধান পরিষদ (Legislative Council / Vidhan Parishad)
-
-
যেমন: বিহার, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ।
✅ বিধানসভার বৈশিষ্ট্য:
-
বিধানসভার সদস্যরা প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন।
-
সদস্য সংখ্যা রাজ্যের জনসংখ্যা অনুযায়ী (প্রচলিত: 60 থেকে 500)।
-
মেয়াদ: ৫ বছর (ভাঙতে পারে রাষ্ট্রপতির শাসনের ক্ষেত্রে)।
✅ বিধান পরিষদের বৈশিষ্ট্য:
-
সদস্যরা আংশিকভাবে নির্বাচিত ও মনোনীত হন।
-
এটি একটি স্থায়ী কক্ষ, প্রতি দুই বছরে এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর নেন।
-
সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা বিধানসভার এক-তৃতীয়াংশের বেশি হতে পারে না।
🔷 ২. রাজ্য আইনসভার ক্ষমতা ও কার্যাবলী:
🏛️ ক. বৈধিক ক্ষমতা (Legislative Powers):
-
রাজ্য তালিকা (State List) ও সমবায় তালিকা (Concurrent List) অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করতে পারে।
-
কৃষি, পুলিশ, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার ইত্যাদি রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন রাজ্যের ক্ষমতা।
💰 খ. আর্থিক ক্ষমতা (Financial Powers):
-
রাজ্যের বাজেট পেশ, কর আরোপ ও সরকারি ব্যয় সংক্রান্ত বিল পাস।
-
অর্থবিল কেবল বিধানসভায় উত্থাপন করা যায়; বিধান পরিষদ শুধু সুপারিশ দিতে পারে।
🧑⚖️ গ. নিয়ন্ত্রণমূলক ও তদারকি ক্ষমতা (Control and Oversight):
-
রাজ্য সরকারের কার্যক্রমের ওপর নজরদারি রাখতে পারে।
-
প্রশ্নোত্তর, নোটিশ, আলোচনার মাধ্যমে সরকারের ব্যর্থতা প্রকাশ করতে পারে।
-
সরকারের বিরুদ্ধে আস্থা/অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে (শুধুমাত্র বিধানসভায়)।
🗳️ ঘ. নির্বাচনী কার্যাবলী:
-
রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচন করে।
-
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করে (নির্বাচনী কলেজ হিসেবে)।
📜 ঙ. সংবিধান সংশোধন:
-
কিছু সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে রাজ্য আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন (যেমন: কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক সংশোধন)।
🔷 ৩. গভর্নরের সঙ্গে সম্পর্ক:
-
রাজ্য আইনসভা গভর্নরের অনুমতিতেই অধিবেশন ডাকে।
-
গভর্নর ভাষণ দেন প্রথম অধিবেশনে।
-
বিধানসভা থেকে পাস হওয়া বিল গভর্নরের অনুমোদন ছাড়া আইন হতে পারে না।
🔷 ৪. উপসংহার:
রাজ্য আইনসভা হলো রাজ্য শাসনের মেরুদণ্ড। এটি রাজ্যের জন্য আইন প্রণয়ন, নীতিনির্ধারণ এবং প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। বিধানসভা জনগণের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত হওয়ায় এটি গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ। আর যেসব রাজ্যে বিধান পরিষদ আছে, সেখানে একটি পর্যালোচনামূলক ও পরামর্শমূলক কক্ষ হিসেবেও কাজ করে।
0 মন্তব্যসমূহ