সংবিধান সংশোধন কী? ভারতের সংবিধান সংশোধন পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে আলোচনা কর।

সংবিধান সংশোধন কী? ভারতের সংবিধান সংশোধন পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে আলোচনা কর।

সংবিধান সংশোধন কী? ভারতের সংবিধান সংশোধন পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে আলোচনা কর।

<<<<<<<<<<<<<< উত্তর >>>>>>>>>>>>>>>>

ভারতের সংবিধান সংশোধন কী?

ভারতের সংবিধান একটি লিখিত ও দীর্ঘতম সংবিধান। এটি 1950 সালের ২৬শে জানুয়ারি কার্যকর হয়। সংবিধান প্রণেতারা এর নমনীয়তা ও কঠোরতার মধ্যে ভারসাম্য রাখতে চেয়েছিলেন। তাই ভারতের সংবিধানে সংশোধনের সুস্পষ্ট পদ্ধতি অনুচ্ছেদ ৩৬৮-এ নির্ধারিত আছে।


ভারতের সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতিগুলি

ভারতীয় সংবিধানে তিন ধরনের সংশোধনের ব্যবস্থা রয়েছে:


১. সাধারণ পদ্ধতি (Simple Majority)

  • কিছু অনুচ্ছেদ ও বিষয়ে সংশোধন আনতে লোকসভা ও রাজ্যসভায় সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা (present and voting) প্রয়োজন হয়।

  • সংবিধানের ৩৬৮ অনুচ্ছেদের অধীনে নয়, বরং সাধারণ আইনের মতো সংশোধিত হয়।

  • যেমন:

    • রাষ্ট্রের নতুন রাজ্য গঠন বা সীমানা পরিবর্তন (অনুচ্ছেদ ৩ ও ৪),

    • সংসদের আসন সংখ্যা পরিবর্তন ইত্যাদি।


২. বিশেষ পদ্ধতি (Special Majority)

  • এই পদ্ধতিতে সংশোধনের জন্য প্রয়োজন:

    • দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যদের সমর্থন, যারা ভোট দেন,

    • এবং সংসদের প্রতিটি কক্ষে মোট সদস্য সংখ্যার অর্ধেকের বেশি সমর্থন।

  • সংবিধানের অধিকাংশ সংশোধন এই পদ্ধতিতে করা হয়।

  • যেমন:

    • মৌলিক অধিকার (আংশিক),

    • কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক,

    • রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি।


৩. বিশেষ পদ্ধতি + রাজ্যসমূহের অনুমোদন (Special Majority + Consent of Half States)

  • কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, উপরোক্ত বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতার পাশাপাশি অন্তত অর্ধেক রাজ্যের অনুমোদন প্রয়োজন হয়।

  • যেমন:

    • কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন (তালিকা),

    • রাজ্যসভা গঠনের পদ্ধতি,

    • রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন।


উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন:

সংশোধনবছরউদ্দেশ্য
প্রথম সংশোধন1951মৌলিক অধিকার সীমাবদ্ধকরণ
৪২তম সংশোধন1976‘ধর্মনিরপেক্ষ’, ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ সংযোজন
৪৪তম সংশোধন1978জরুরি অবস্থার অপব্যবহার রোধ
৭৩তম ও ৭৪তম1992পঞ্চায়েত ও পৌর প্রশাসন ব্যবস্থা

উপসংহার:

ভারতের সংবিধান সংশোধনের ব্যবস্থা এটি নমনীয় ও কঠোর—দুইই। এটি পরিবর্তনের মাধ্যমে সময়োপযোগী রাখা সম্ভব, আবার মৌলিক কাঠামো রক্ষা করাও সম্ভব। তাই, বিচারব্যবস্থা ‘সংবিধানের মৌলিক কাঠামো’ (Basic Structure Doctrine) রক্ষা করে, যাতে তা নির্বিচারে পরিবর্তিত না হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ