ভারতের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা কর।

ভারতের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা কর।

ভারতের সংবিধানের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা কর।

...........................উত্তর...............................

আমাদের ভারতের সংবিধান বিশ্বের বৃহত্তম এবং সর্বাধিক বিস্তারিত সংবিধানগুলির মধ্যে একটি। এটি ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ সালে কার্যকর হয় এবং সেই দিনটি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই সংবিধান ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। ভারতীয় সংবিধানের বহু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা তাকে অন্যান্য দেশের সংবিধান থেকে আলাদা করেছে। নিচে ভারতের সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি ৫০০ শব্দে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো: -

১. লিখিত এবং বিস্তারিত সংবিধান :
ভারতের সংবিধান একটি লিখিত দলিল, যাতে ৪৪৮টি অনুচ্ছেদ, ২৫টি ভাগ, ১২টি তফসিল এবং বহু সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত আছে। এতে রাষ্ট্রের কাঠামো, নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্য, সরকারের বিভিন্ন শাখার কার্যপ্রণালী ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

২. গণতান্ত্রিক ও প্রজাতান্ত্রিক কাঠামো :
ভারত একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, যেখানে জনগণই সর্বোচ্চ ক্ষমতার উৎস। জনগণ সরাসরি ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করে এবং সরকার গঠনে অংশগ্রহণ করে।

৩. সার্বভৌমত্ব:
ভারতের সংবিধান দেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। অন্য কোন বিদেশি শক্তি ভারতের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নীতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

৪. ধর্মনিরপেক্ষতা:
ভারতের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতাকে সমর্থন করে। রাষ্ট্র কোন নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতি পক্ষপাত করে না এবং সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে।

৫. মৌলিক অধিকার:
সংবিধানের ৩য় ভাগে (অনুচ্ছেদ ১২-৩৫) নাগরিকদের মৌলিক অধিকার যেমন - সমতা, স্বাধীনতা, শোষণবিরোধিতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সাংস্কৃতিক অধিকার ও সংবিধানিক প্রতিকার অন্তর্ভুক্ত আছে।

৬. মৌলিক কর্তব্য:
১৯৭৬ সালের ৪২তম সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানে মৌলিক কর্তব্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রের প্রত্যাশিত আচরণ এই অংশে নির্ধারিত।

৭. কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার:
ভারতে দ্বৈত সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান, অর্থাৎ কেন্দ্র ও রাজ্যের পৃথক সরকার আছে। কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের দায়িত্ব ও ক্ষমতা সংবিধানের সপ্তম তফসিলে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে (কেন্দ্রীয় তালিকা, রাজ্য তালিকা ও সমবায় তালিকা)।

৮. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা:
ভারতের বিচার ব্যবস্থা স্বতন্ত্র এবং বিচারপতিরা সরকার থেকে স্বাধীন। সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট এবং নিম্ন আদালত সমন্বিতভাবে ন্যায়বিচার প্রদান করে।

৯. সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা:
ভারত একটি সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যেখানে রাষ্ট্রপতি নামমাত্র প্রধান, কিন্তু প্রকৃত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকে। সংসদ দুটি কক্ষ নিয়ে গঠিত – লোকসভা (নিম্ন কক্ষ) ও রাজ্যসভা (উচ্চ কক্ষ)।

১০. সংশোধনযোগ্যতা:
ভারতের সংবিধান নমনীয় ও কঠোর উভয় বৈশিষ্ট্য যুক্ত। অনুচ্ছেদ ৩৬৮ অনুসারে কিছু অনুচ্ছেদ সংসদীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সংশোধনযোগ্য, আবার কিছু অনুচ্ছেদের জন্য রাজ্যগুলোর সম্মতিও আবশ্যক।

১১. একক নাগরিকত্ব :
ভারতের সমস্ত নাগরিকের জন্য একক নাগরিকত্বের বিধান রয়েছে। একজন ভারতীয় নাগরিক দেশের যেকোনো অংশে বাস, কাজ ও স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারেন।

১২. স্বাধীন নির্বাচন কমিশন :
নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, যা অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য দায়বদ্ধ। এটি একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন সংস্থা।

১৩. পঞ্চায়েত ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা :
৭৩তম ও ৭৪তম সংশোধনী সংবিধানে পঞ্চায়েত রাজ ও নগর প্রশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে, যা গণতন্ত্রকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে।

১৪. ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য :
ভারত বহু জাতি, ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মের দেশ। সংবিধান এই বৈচিত্র্যকে সম্মান জানিয়ে সবাইকে সমান সুযোগ ও অধিকার দিয়েছে।

উপসংহার :
ভারতের সংবিধান শুধুমাত্র একটি আইনি দলিল নয়, এটি জাতির মূল্যবোধ, আকাঙ্ক্ষা ও ঐক্যের প্রতীক। এর বৈচিত্র্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্যসমূহ ভারতে একটি সুসংহত, স্থিতিশীল এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি শুধু আইনগত কাঠামোই নয়, বরং ভারতের আত্মারও প্রতিফলন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ