মৌলিক অধিকার ও নির্দেশমূলক নীতির মধ্যে পার্থক্য লেখ।

মৌলিক অধিকার ও নির্দেশমূলক নীতির মধ্যে পার্থক্য লেখ।

 মৌলিক অধিকার ও নির্দেশমূলক নীতির মধ্যে পার্থক্য লেখ। 

>>>>>>>>>>>>>উত্তর<<<<<<<<<<<<<

ভূমিকা : 

সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত "মৌলিক অধিকার" ও "নির্দেশমূলক নীতিসমূহ" একটি রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ দুটি দিক। যদিও দুটোই নাগরিকের কল্যাণ ও রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামোর ভিত্তি, তবুও এদের মধ্যে মৌলিক কিছু পার্থক্য রয়েছে। এই লেখায় আমরা তাদের মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যগুলি আলোচনা করব।

১. সংজ্ঞাগত পার্থক্য:

==মৌলিক অধিকার হলো সংবিধানে নিশ্চয়তা দেওয়া এমন কিছু অধিকার যা প্রত্যেক নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিসেবে গণ্য হয় এবং আইনের মাধ্যমে তা সুরক্ষিত। উদাহরণস্বরূপ, বাকস্বাধীনতা, ধর্মের স্বাধীনতা, সমতা, জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার ইত্যাদি।

==অন্যদিকে, নির্দেশমূলক নীতি (Directive Principles of State Policy) হলো সংবিধানের একাংশ যেখানে রাষ্ট্র পরিচালনায় করণীয় নীতিমালা দেওয়া হয়েছে। এগুলো নৈতিক ও রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত, যা সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক না হলেও গুরুত্বপূর্ণ।


২. আইনগত বাধ্যবাধকতা:

==মৌলিক অধিকার আইনের মাধ্যমে প্রয়োগযোগ্য এবং কোনো নাগরিকের এই অধিকার লঙ্ঘিত হলে তিনি আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ অনুসারে, মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে রিট দায়ের করা যায়।

==অন্যদিকে, নির্দেশমূলক নীতিগুলি আদালতের মাধ্যমে বলবৎ করা যায় না। এগুলো ন্যায্য ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের উদ্দেশ্যে সরকারকে দেওয়া দিকনির্দেশনা মাত্র। এগুলোর লঙ্ঘনের জন্য আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার চাওয়া যায় না।


৩. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:

==মৌলিক অধিকার ব্যক্তিকেন্দ্রিক – প্রতিটি ব্যক্তির মর্যাদা, স্বাধীনতা ও অধিকার সংরক্ষণের জন্য গৃহীত।

==নির্দেশমূলক নীতি সমাজকেন্দ্রিক – সমগ্র সমাজের সার্বিক কল্যাণ, সাম্য, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রণীত।


৪. সময়কাল ও প্রয়োগ:

==মৌলিক অধিকার স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর হয় এবং অবিচ্ছেদ্য। রাষ্ট্র তা অমান্য করতে পারে না।

==নির্দেশমূলক নীতির প্রয়োগ ধাপে ধাপে, রাষ্ট্রের সামর্থ্য অনুযায়ী সময়ের সাথে সম্পন্ন হতে পারে।


৫. উৎস:

==মৌলিক অধিকার মূলত মার্কিন সংবিধান থেকে গ্রহণ করা হয়েছে।

==নির্দেশমূলক নীতিগুলি আইরিশ সংবিধান থেকে অনুপ্রাণিত।


৬. সংশোধনযোগ্যতা:

== সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে মৌলিক অধিকার পরিবর্তন করা কঠিন এবং তা "মূল কাঠামো" (basic structure) পরিবর্তন না করেই করতে হয়।

==নির্দেশমূলক নীতিগুলি তুলনামূলক সহজে সংশোধনযোগ্য এবং সময়োপযোগীভাবে রূপান্তরিত করা যায়।


উপসংহার:

মৌলিক অধিকার ও নির্দেশমূলক নীতি—উভয়ই সংবিধানের অপরিহার্য অংশ। প্রথমটি নাগরিকের অধিকার রক্ষায় নিয়োজিত, দ্বিতীয়টি রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব পালনে সহায়ক। একদিকে যেমন মৌলিক অধিকার মানুষের স্বাধীনতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করে, অন্যদিকে নির্দেশমূলক নীতিগুলি সমাজে সাম্য, ন্যায় ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারকে উৎসাহিত করে। এই দুটি একসাথে রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমূলক রূপ দেওয়ার পথে অগ্রণী ভূমিকা রাখে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ